স্কুল ইতিহাস
বগুড়া জিলা স্কুল আমাদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতার ফুল ফোটানের হয় ”
বগুড়া জিলা স্কুল বৃটিশ শাসনাধীন তদানিন্তন বগুড়া জেলায় ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি বগুড়া জেলার সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যাপীঠ এবং দেশের মধ্যে একটি অত্যান্ত সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার ব্যাবস্থা রয়েছে । স্কুলটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার ১৫০ বছর উদযাপন করে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ বগুড়া জিলা স্কুল ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাবু ভাগাবতি চরন ঘোষ ছিলেন স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক । প্রতিষ্ঠার পর প্রথমে ইংরেজি মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানাধিন ভাবে শিক্ষাদান শুরু হলেও অল্পসময়ের ব্যাবধানে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর জনাব রাসেল এবং সহকারী কালেক্টর বাবু এস, মুখার্জির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুলটি সরকারি ব্যাবস্থাপনাধীন হয় । বাবু ভগবতি চরনের সময়কালে স্কুলে মাত্র চার জন শিক্ষক ছিলেন । বাবু ভগবতির পর এ. সি মুখার্জি ১৮৫৯ সালে প্রধান শিক্ষক হন । তার সময়কালে দুই জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বিভাগ এবং ১৮৬২ সালে একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি সহ প্রথম বিভাগে পাশ করেন । ১৮৭৩ সালে স্কুলটিতে ছয় জন শিক্ষক, একজন পণ্ডিত এবং একজন মৌলোভী ছিলেন । ১৮৬১ সালে স্কুলে সর্বমোট ৮৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।
অবস্থানঃ বগুড়া জিলা স্কুল বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত। স্কুলের পূর্ব পাশে সার্কিট হাউস এবং দক্ষিণ পাশে আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠ অবস্থিত। স্কুলের সামনেই উত্তরপার্শ্বে কেন্দ্রীয় জেলা পোস্ট অফিস।
উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া, আর বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত “বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া”। স্ব-নামোজ্জ্বল, স্ব-মহিমায় ভাস্বর, ঐতিহ্যমন্ডিত ফুলের বাগান স্বরূপ এই বিদ্যাপীঠটি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ গঠন ও তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বগুড়াবাসী এই বিদ্যালয়কে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছিল তা যথাযথ ভাবে পালনের মাধ্যমে আজও সে প্রতিরোধ্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে শ্রেষ্ঠত্ত্বের যে মণিমুকুট তার মাথায় শোভিত হয়েছিল আজ অবধি সেই মুকুট উজ্জ্বল, অম্লান, অমলিন। আজও সে মুকুট থেকে বেরিয়ে আসছে মহা সম্মান এবং সাফল্যের দ্যূতি ও ঝলক।
“কোন এক বিদ্যাপিঠের কথা তোমায় শোনাই শোন রূপকথা নয় সে নয়, জন্মের শুরু থেকে জ্ঞানীজনের হাতে গড়া ও তার শীর্ষে উঠারকাহিনী শোনাই শোন”।
পটভূমিঃ ১৮৪৪ সালে ইংরেজ প্রশাসক লর্ড হার্ডিঞ্জ যখন ইংরেজি শিক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে অগ্রাধিকার দেন তখন সেই ইংরেজি শিক্ষার জোয়ার স্পর্শ করে বরেন্দ্র ভূমিকে, স্পর্শ করল বগুড়াকেও। তাই ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বগুড়ায় জন সাধারণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ছিল বর্তমান জিলা স্কুলের ভ্রুনমূল এই ভ্রুণমূল নামক এই বিদ্যালয়কে ঐ সালেই বিদ্যোৎসাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর মিঃ রাসেল সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তদানীন্তন ডেপুটি কালেক্টর বাবু সূর্য্য কুমার মুখোপাধ্যায় -এর অশেষ পরিশ্রমে গভর্নমেন্ট –এর তত্ত্বাবধানে আনেন এবং “BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL” নামে আখ্যায়িত করেন। এই বিদ্যালয়টি গভর্নমেন্ট হওয়ার সাথে সাথেই তীব্র গতিতে উন্নতির পথে ধাবিত হতে থাকে এবং বাবু ভগবতী চরন ঘোষ মহাশয় -এর প্রথম হেড মাস্টার হন। এর পর পদ্মা মেঘনা ও যমুনায় বহু পানি বয়ে গেছে। বদলী হয়েছেন এই বিদ্যালয় অঘোর চন্দ্র সহ বহু প্রধান শিক্ষক। পরিশেষে ১৮৬৫ সালে BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL -এর নাম পরিবর্তন করে শুধু BOGRA ZILLA SCHOOL নাম রাখা হয় আর এই মাহেন্দ্রক্ষণে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু পার্বতিচরন রায় (বি. এ.)। ১৮৭৩-৭৪ সালে এই স্কুল গৃহটি তথা বিদ্যালয়টি সুত্রাপুরের “ব্রহ্ম সমাজ মন্দিরের কাছে অবস্থিত ছিল। পরবর্তীতে ১৮৮১-৮৫ খ্রিস্টাব্দে এটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং ঐ অব্দেই আগত প্রধান শিক্ষক বাবু গিরিশ চন্দ্র মিত্র (জে. সি. মিত্র) -এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুল গৃহটি ইটের তৈরী পাকা বিল্ডিং এ নির্মিত হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লেঃ গভর্নর স্যার রিভার থমসন এর নামে বিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে (সাতমাথার কোল ঘেঁষে) একটি থিয়েটার হল নির্মান করেন যা কাল ক্রমে বিদ্যালয়ের পাঠাগারে রূপান্তরিত হয়। সুন্দর কারুকার্য খচিত এই পাঠাগারটি আজও শিক্ষার্থীদের হৃদয় স্পন্দন হিসাবে কাজ করছে। এর ছাত্র সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে ১৯১৯ সালে এই বিদ্যালয়ে একটি দ্বি-তল ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। এতে হিন্দু মুসলমান ছাত্ররা ভাই ভাই এর মত একত্রে বসবাস করত। কিন্তু রান্না ও খাওয়া দাওয়ার জন্য পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ডাইনিং ছিল। তৎকালীন এক অভিজ্ঞ সুপারিনটেনডেন্ট সাহেবের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও কর্ম প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সু-শৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে পারিবারিক আনন্দ উপভোগ করে বসবাস করত ও পাঠ অভ্যাস করতে সক্ষম হত। পাকিস্তান আমলে এই ছাত্রাবাসের নাম ছিল “মুসলিম ছাত্রাবাস” কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে -এর নাম রাখা হয ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ স্কুলের ছাত্র দোলনের নামানুসারে “শহিদ দোলন ছাত্রাবাস”। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে গণপূর্ত বিভাগ এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষনা করলে ধীরে ধীরে তা ছাত্র শূণ্য হয়ে পড়ে এবং ১৯৯৯ সালে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে ডাইনিং হল ২ টি ভেঙ্গে তদস্থলে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। আর পরবর্তীতে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্¡াবধানে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ঐতিহাসিক ছাত্রাবাসটি মেরামত করে বসবাসের উপয়োগী করা হয়। এই ছাত্রাবাসের নীচের ২ টি কক্ষ বর্তমানে টিফিনরুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এতে ২০০৪ জন ছাত্র ৫০ জন শিক্ষক এবং ১৫ জন কর্মচারির মোট ২০৬৯ জন মানুষের টিফিন তৈরি ও বিতরণ করা হচ্ছে।
সু-শৃঙ্খল ভাবে ঐতিহ্যের স্বাক্ষর হিসাবে এই ছাত্রাবাসটি যেন আজও লাল রং এর আবীরমাখা শাড়ীপরে ও লাল টিপদিয়ে খাদ্য দান কারী মাতা হিসাবে অবিচল দাঁড়িয়ে আছ। ১৯৪৪-৫০ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব এ. কে. এম. আজিজ। ১৯৬০ -এর দশকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক জনাব মঈন উদ্দীন আহম্মদ (টি. কে.)। তৎকালীন সময়ে ১৯৬২ সালে বগুড়া জিলা স্কুলের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশের হার ১০০% এর উন্নীত হয় এবং এই ধারাবাহিকতা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। শুধুমাত্র ১৯৬৪ সালে পাশের হার ছিল ৯৮.৩০ %। ঐ সময় ১৯৬৪ সালে মোঃ সাজেদুর রহমান নামে একজন ছাত্র রাজশাহী বোর্ডে ১ম স্থান অধিকার করেন একই বছরে আব্দুল কাইয়ুম নামের আরেক জন ছাত্র বোর্ডে ৩য় স্থান লাভ করেন। এ ছাড়া প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৬৫ সালে বোর্ডে ২য় স্থান লাভ করেন। জ্ঞানে গুণে ও কঠোরতায় এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এই প্রধান শিক্ষক জনাব মঈন উদ্দীন আহম্মদ (টি. কে.) স্যারের সমাজ সেবা ও চাকুরীতে সন্তুষ্ট হয়ে তৎকালীন পাকিস্থান সরকার তাঁকে ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা দিবসে “তয়মায়ে খেদমত” খেতাবে ভূষিত করেন।
১৯৭১-১৯৮০ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন জনাব মঈন উদ্দীন আহম্মদ স্যারের যোগ্য উত্তর সূরী জনাব তাজমিলুর রহমান স্যার। ছাত্রদের নৈতিক মান ধরে রাখার জন্য তিনি এই বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের উপর বিশেষ জোর দেন। তাঁকে কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বগুড়া জিলা স্কুলের ১৫০ বছর পুর্তি উৎসব তাঁর শিক্ষকতার অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৮১ সালে জনাব তাজমিলুর রহমান স্যার অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর অবসর গ্রহণের পরবর্তী ১০ বছরে ৫ জন প্রধান শিক্ষক এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক মুক্তিযোদ্ধা তৈরির সূতিকাগারঃ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বগুড়া জিলা স্কুলের অবদান ছিল অসীম। যুদ্ধের প্রাক্কালে জিলা স্কুল ক্যাডেট কোর এর ২৮ টি রাইফেল নিয়ে স্কুল মাঠে কুমিল্লা থেকে আগত এক হাবিলদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র শিক্ষকগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদের মধ্যে জীবন উৎসর্গ করে শহিদের মর্যদা লাভ করেন চিশতী হেলালুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ পাইকাড় খোকন, শহিদ টি. এম. আইয়ূব টিটু, শাহ আব্দুল মমিন হিটলু, সাইফুল ইসলাম, মাসুদ আহম্মেদ মাসুদ, টিপু ও দোলন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলে এই স্কুলে। শিক্ষকগণ স্কুল শেষে গ্রামে ফিরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্যাম্পের খবর সরবরাহ করতেন। বগুড়া জিলা স্কুলের কৃতি ছাত্র মেজর (অবঃ) এ. টি. এম. হামিদুল হোসেন তারেক বীর বিক্রম, পিএসসির নেতৃত্বে ভারতের গুর্খা বাহিনীর সহযোগিতায় বগুড়া জিলা স্কুলকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এই অর্থে বগুড়া জিলা স্কুল প্রাতিষ্ঠানিক মুক্তিযোদ্ধা তৈরীর সৃতিকাগার এবং এ স্কুলের ঐ ছাত্ররাও স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধার আসনে সমাসীন হয়ে থাকবে চিরদিন। এছাড়া যুদ্ধোত্তর নবীন বাংলাদেশেও জিলা স্কুল সুষ্ঠুভাবে পচিালিত হয়েছিল বলেও তখন এ স্কুলের ছাত্র এসএসসি তে মেধা তালিকায় ঠাঁই করে নেয়। তাই ১৯৭১ সালে মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২য় স্থান এবং ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ ফারুকও বোর্ডে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে কড়াকড়ি শাসনের মূর্ত প্রতীক জনাব আব্দুল হাই প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদানের পর তাঁর সু-শৃঙ্খল স্কুল পরিচালনার জন্য ১৯৯৪ সালে বগুড়া জিলা স্কুল শ্রেষ্ঠ স্কুলের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম স্থান সহ মোট ৮ জন সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পায়। ১ম স্থান অধিকারী কৃতি ছাত্রটির নাম অবিনাশ রায়।
কৃতী শিক্ষার্থীঃ
বগুড়া জিলা স্কুলে বাংলাদেশের অনেক কৃতী ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন-
হুমায়ূন আহমেদ, জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক।
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকার ও শিক্ষাবিদ।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, খ্যাতিমান বাংলা ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক।
জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি
মুশফিকুর রহিম, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ।
১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে সরকারের গৃহীত পিএসসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তরুণ প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১৯৯৯ সালে প্রথম যোগদান করেন জনাব মোঃ শফিকুর রহমান এবং এর ধারাবাহিকতায় পরে জনাব মোঃ রমজান আলী আকন্দ সাহেব যোগদান করেন। বর্তমানে জনাব মোঃ রমজান আলী আকন্দ সাহেবই বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলের পাশাপাশি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে, তাকে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে, সুনাগরিক হয়ে সমাজ ও দেশের নেতৃত্ব দানের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। তবেই হবে সে একজন আদর্শ ছাত্র। তাই এমন শিক্ষার্থী গড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ রমজান আলী আকন্দ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং এই উদ্দেশ্যে তিনি সকল কাজে ছাত্রদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তাই বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এসেছে গতি, এসছে দ্রুততা। বর্তমানে অডিটোরিয়ামের সংস্কার হওয়ায় এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ বিদ্যালয়ে একটি উন্নত মানের কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রজেক্টর ব্যবহার করে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয় যা সরকারের ভিশন ২০২১ পূরণে সক্ষম হবে। এছাড়া বর্তমান প্রধান শিক্ষক সাহেবের আমলে আরও কিছু নতুন কর্মসূচীও গ্রহণ করেন ও তার বাস্তবায়ন করেন সেগুলি হলঃ
১. ছাত্রদের সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ।
২. স্কুলের বারন্দায় ও মাঠের উত্তর পূর্ব পার্শ্বে অভিভাবকদের জন্য বসার স্থান নির্মাণ করা হয় যা অন্যান্য স্কুলে নেই। এতে ছাত্র ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘব হয়েছে।
৩. কম্পিউটার ল্যাবের সংস্কার ও প্রসারণ।
৪. আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি নির্মাণ।
৫. ছাত্রদের টিফিন বক্সের মাধ্যমে টিফিন প্রদান।
৬. মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায়ের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে তাঁদের নামাজ আদায় সহজ হয়েছে।
৭. স্বরস্বতি পূজা উদযাপন চালু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে।
৮. বৃক্ষরোপণঃ প্রতিবছর প্রধান শিক্ষক স্যারের সহযোগিতায় এই স্কুল প্রাঙ্গনে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় এবং ছাত্রদের মাঝে ফলজ বৃক্ষ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। তাই অগনিত বৃক্ষে বগুড়া জিলা স্কুল ভরপুর। উল্লেখ্য এই স্কুলের জমির পরিমাণ ০৫ একর।
৯. প্রতি শিক্ষা বছরের শুরুতে শ্রেণিভিত্তিক পিকনিক স্কুল প্রাঙ্গনে জাকজমক আনন্দ ঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছাত্রদের সজিব ও প্রাণোচ্ছ্বল করে তোলে।
ভর্তি প্রকৃয়াঃ
স্কুলটির ভর্তি প্রক্রিয়া খুবই প্রতিযোগিতামূলক । প্রতি বছর ২৪০ টি আসনের বিপরীতে প্রায় ২৫০০-৩০০০ ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে ।
পরিশেষে বলা যায় ১৬১ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়ার ইতিহাসের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এই ক্ষুদ্র পরিসরে সামান্যই লেখা হল কিন্তু এ ইতিহাসে এই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র ও সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়গণ যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তার বিন্দুমাত্রও লেখা হলনা । তাই অসম্পূর্ণ অতৃপ্তিই রয়ে গেল।
অবশেষে এ বিদ্যাপীঠ ও এর কোমলমতি ছাত্রদের সবার জন্য দো’য়া চেয়ে বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়ার ইতিহাস লেখার ইতি টানলাম।